একজন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া

একজন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া

মতিহার বার্তা ডেস্ক : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার (সুধা মিয়া) ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রচারবিমুখ এই মানুষটির হাত ধরেই সূচনা হয়েছিলো বাংলাদেশর আধুনিক পরমাণু বিজ্ঞান। তিনি ছিলেন দেশে আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি পরমাণু গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। ক্ষমতার অনেক কাছাকাছি থেকেও কখনও ক্ষমতার দাপট দেখাননি। এটাই ছিল তার জীবনের অন্যতম বড় একটি দিক। মেধাবী এই মানুষটি নীরবে, নিভৃতে নিরলসভাবে গবেষণায় থেকে দেশের উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার গবেষণা কর্মের পরিধি ছিল বিস্তৃত। তিনি ফান্ডামেন্টাল ইন্টারেকশন এন্ড পার্টিক্যাল ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার এন্ড রেক্টর ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, হেলথ এন্ড রেডিয়েশন ফিজিক্স, রিনিউবল এনার্জি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গবেষণা করেন। তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের দু’বার সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ পদার্থ বিজ্ঞানী সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তাঁরই পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় সমন্বিত উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাংলাদেশের আধুনিক পরমাণু বিজ্ঞানের প্রাণপুরুষ। তাঁর নেতৃত্বেই এদেশের পারমাণবিক খাতে উন্নয়ন ও গবেষণা হয়েছে। তাঁর তখনকার উদ্যোগের ফলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণোদ্দমে উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। ষাটের দশকে তিনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং কিছু দিন জেল খাটেন।

১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খ্যাতিমান এই পরমাণু বিজ্ঞানী। তার বাবা আব্দুল কাদের মিয়া এবং মাতা ময়েজুন্নেসা। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ছিলেন এম. এ ওয়াজেদ মিয়া। অসাধারণ মেধার অধিকারী ওয়াজেদ মিয়া শৈশব থেকেই শিক্ষানুরাগী ছিলেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর দেশে ফিরে একই বছর ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বিয়ে করেন তিনি। দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যাসহ হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুগে ৬৭ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ৯ই মে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে বরেণ্য এই পরমাণু বিজ্ঞানী না ফেরার দেশে যাত্রা করেন। মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এদেশে যতদিন বিজ্ঞান চর্চা হবে ততদিন বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে স্বমহিমায় ভাস্কর থাকবেন।

মতিহার বার্তা ডট কম – ০ মে, ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply